কঠোর শ্রমেই এসেছে সফলতা



সময় ২০১০ সাল, আমি তখন ডিগ্রীতে পড়াশোনা করি। সংসারে মোট দুই ভাই, তিন বোন। আমি সবার ছোট। বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে। আব্বা পাশের এক থানার মসজিদে ইমামতি করতেন। বড় ভাই সংসার থেকে আলাদা। আমি অনার্সে চান্স পাওয়ার পরও পড়তে পারিনি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে।

আব্বা বাসায় না থাকার কারণে আমাকেই সংসারের সকল কাজকর্ম করতে হয়। নানা রকম কাজ করে সংসারটি ভালোভাবে চালানোর চেষ্টা করি। আগে আমাদের বিলে জেলেদের সাথে সারা রাত মাছ ধরতাম, বিনিময়ে কোনদিন ত্রিশ টাকা বা পঞ্চাশ টাকা পেতাম। আবার কখনো জমিতে রসুন লাগানোর  কাজ করতাম।

এক সময় পাশের বাড়িওয়ালার জমিতে কাজ করেছি ত্রিশ টাকা দিন মজুরীতে। একটানা নয় দিন কাজ করার পর একদিন আছরের নামাজ পড়তে গিয়ে একটু দেরি হওয়ায় আর কাজে নিল না।

আমাদের এলাকার লোকেরা মানিকগঞ্জে কাজ করতে যেত। আমি সেখানেও কাজ করেছি। এমন অনেক কাজের ইতিহাস আছে। যাই হোক, এক পর্যায়ে এলাকার এক বড় ভাই একটি বিড়ি বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নিয়ে দিলেন। অনেক বুঝে দেখলাম, এই বিড়ি মানুষ খায়না। পরে চাকরিটা ছেড়ে এক বিস্কুট কোম্পানিতে কাজ শুরু করলাম। আলাøহর অশেষ রহমতে ভালো বেতন পাওয়া শুরু হলো।

এসময় আমি বিয়ে করলাম। বিয়ের তিন মাস পর আব্বা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। খুব কষ্ট পেলাম, তা আর বলে বুঝানো সম্ভব না। যাই হোক, মাস শেষে যখন বেতন পেতাম তখন আম্মার হাতে দিলে আম্মা খুব খুশি হয়ে আমার জন্য অনেক দোয়া করতেন। এভাবে চাকরি করে কিছু সঞ্চয় হলো। সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যবসা করবো ।

বিস্কুট কোম্পানির ডিলার নিলাম। ভালোই চলছিল ব্যবসা। এরই মধ্যে, কয়েক বছর পর পাশাপাশি একটা চাকরির জন্য চেষ্টা করি। রিটেন পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রস্তুিতর জন্য কিছু টাকা ধার নিয়েছিলাম কিন্তু ওই চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হলেও আমার চাকরিটা আর হয় না।

আমি তখন আমার ব্যবসা থেকে টাকা বের করে ধার পরিশোধ করি। ব্যবসার খরচাদি ঠিকই আছে কিন্তু ক্যাশ কমের কারণে বিক্রি কম। পড়লাম লোকসানে। শেষমেষ ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হলাম। কিছু টাকা ছিল তা জমিয়ে রাখলাম। শুরু করলাম আবার বিস্কুট কোম্পানিতে চাকরি, চললো এভাবে তিন বছর। আবার কিছু টাকা জমিয়ে শুরু করলাম একটা ফিড কোম্পানির ডিলার নিয়ে ব্যবসা। এখন এই ব্যবসার বয়স ছয় বছর।

আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেক ভালো আছি। এখন আমি মনে করি ওই চাকরিও আমার জন্য ভালো ছিল না।  ব্যবসার হিসাব আগে খাতায় রাখতাম, আর এখন সব খাতা ফেলে হিসাব রাখছি টালিখাতা অ্যাপে। আলহামদুলিল্লাহ !